রাজবংশী সংস্কৃতির কথা

editorial

 ‌‌ডাঃ দ্বিজেন্দ্র নাথ ভকত ( অধ্যাপক)

সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের খেও ধরিয়া  রাজবংশী সংস্কৃতির কথা আলোচনা করিলে আমরা কাতোগুলান কথা উপলব্ধি করিবার পাই। তারে হাইলত ফেলেয়া আমার আলোচনা সংক্ষেপে করার চেষ্টা করিলং। রাজবংশীলার উৎপত্তিত বিষয়ে নৃবিজ্ঞানী আর ঐতিহাসিক পণ্ডিত গুলানে কয় যে, রাজবংশীলার দেহার গঠনের দিক দিয়া মঙ্গোলীয়ান নরগোষ্ঠীর। কিন্তুক উমার সাথত প্রটোঅষ্ট্ৰলাড গোষ্ঠীর রক্ত মিশল হৈছে। ভাষাতাত্বিক পণ্ডিত গুলানে কয় ইমরা আগতে রাড়াভাষী লোক আছিলো। ইমাক কোচ-বুলিয়া কওয়া হৈছিল। পরে ইমরা হিন্দু ধর্ম নিয়া রাজবংশী হয় যদিও ভারতবৰ্ষর আৰ্যগুলানে সৃষ্টি করা জাত-পাতের সমাজ ব্যবস্থা থাকিয়া ইমরা সম্পূর্ণ আলাদা। আর্য ক্ষত্রিয় হিন্দু সংস্কৃতি থাকিও পৃথক। ইমার একটা নিজের সংস্কৃতি আছে। গৈরব করার  মতো ইতিহাস আছে। নিজস্বতা আছে, হাজার বছরের পুরাণা সংস্কৃতি আছে। ইমরা হিন্দু ধর্ম নিলেও পুরামাত্রায় হিন্দু হয় নাই। নিজের সমাজ সংস্কৃতির আচার, নীতি, সংস্কার, পূজাপার্বন, ধৰ্মের কাতোগুলান বিশ্বাস ছাড়িবার পায় নাই।

সমাজ বিজ্ঞানী গুলানে রাজবংশী সংস্কৃতির অনেক উপাদান, আচার সংস্কার, ভাষা, ধর্ম ইত্যাদি অধ্যয়ন করিয়া কতোগুলান তথ্য আবিস্কার করিছে যে রাজবংশী লোকগুলানে মরার পরে আত্মা আছে বুলিয়া বিশ্বাস করে, মরা মানষির প্ৰতি শ্ৰদ্ধা জানায়, তন্ত্র-মন্ত্র, ইন্দ্রজাল বিশ্বাস করে, প্ৰকৃতিক মাও হিসাবে পূজা করে, শিবলিঙ্গ, দেবীরবাহন, জীব-জন্তুর পূজা, গেরামদেবতা, নদী, গছ, বন- জঙ্গল, পৰ্বত ইত্যাদির ভিতিবা থাকা শক্তির পূজা করে। মানুষের রোগ বেয়াধি, বয়া ঘটনা গুলান অপশক্তি দেও-ভূত, পেত্নীর দ্বারায় সংঘটিত হয় বুলিয়া বিশ্বাস করে। নানান বাধা নিষেধ, জন্ম- মৃত্যু বিয়াৰ আচার, নয়াখাওয়া পুষ্পা, হোলি, বেষমা, চড়কপূজা, গাজন, মনসা, বিষহরি, মাবাই, শীতলা, কালী, মাশান ইত্যাদির পূজাত জন জাতীয়  বৈশিষ্ট্য আছে। দশম গতি কাজত চাউল, কলা, কলারগাছ, নারিকল, ওয়া- পাণ, আইলপন ইত্যাদির ব্যবহার, লিঙ্গ পূজাত ঘটির ব্যবহার, গ্ৰহ শান্তিৰ জন্যে তাবিজ-কবজ ইত্যাদি আর্য ভিন্ন উপাদান রাজংশী সংস্কৃতিত পাওয়া যায়। অন্যপাকে বিয়ার সমায় গাত হলধী দেওয়া, পাণের ব্যবহার স্ত্রীআচার গুলাতো জনজাতীয় বৈশিষ্ট্য আছে। এই গুলান রাজংশী সমাজের আসল বস্তু।

সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের হাইলত ফেলেয়া বিচার করিলে এইগুলা বৈশিষ্ট্যর সাথত অন্য জনজাতীয় লোকের বৈশিষ্ট্যরো মিল পাওয়া যাইবে। রাজবংশী লোকগুলালে প্রাগঐতিহাসিক কাল থাকিয়া নানান উত্থান পতন পার হয়া আজিকার সমাজ ব্যবস্থাত উপনীত হৈছে। তথাপি ইয়ার বাচিয়া থাকার পদ্ধতি বা জীবিকা, সামাজিক পরিকাঠামো, সংস্কার ধৰ্মীয় বিশ্বাস ভাষার তন্ত্র ঢং ইত্যাদিলার সাথত পুরাণা দিনের মিল খুজিয়া পাওয়া যায়। অনেক দিন ধরি রাজবংশী লোকগুলানে আর্য, অনার্য জাতির সাথত একেসাথে বসতি, মেলামিশা ভাবের আদান প্রদান, দেওয়া নেওয়া থাকিলেও নিজের নিয়ম-নীতিক ইমরা শ্রদ্ধা করে। ইমরা ঐতিহ্যপূৰ্ণ তেপুরানি জীবিকা কৃষি কামাই করিয়া বাপ-ঠাকুরদার নীতি- নিয়াম বত্তে রাখে। ভাতত স্বাধীন হওয়ার পরে অসম, বংগ, বিহার, নেপাল, ত্ৰিপুরা, মেঘালয়, ভূটান আর বাংলাদেশের রাজবংশীগুলানের কিছু ছাড়া-ধরা রীতি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করিয়া অসম বঙ্গের ক্ষেত্ৰত অসমীয়া বাংলা সংস্কৃতির ঠেলাত কিছু ছাড়া ধরা নাহওয়া নাহয়। মেলামিশা, দেওয়া-নেওয়া, একে ভাষাতে কথা কওয়ার ফলত সংস্কৃতিত বদলি গেইছে বুলিয়া

ভাবে আর কাঙো কাঙো বাংলা অসমীয়া সংস্কৃতির অংশীদার রাজবংশী সংস্কৃতি বুলিও কয়। রাজবংশী লোকগুলানে যে ঐতিহ্যপূর্ণ সংস্কৃতি প্রতিপালন করিয়া আছে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। অনেক দিন ধরি বৰ্ণ হিন্দু সংস্কৃতির সাথত সহ অবস্থান করিয়া থাকিলেও ইমার ঐতিহ্যবাহী নিজের আচার তথা স্ত্রীসংস্কার বা আচার গুলান হারেয়া যায় নাই।

ধর্ম পালনের বেলা বৰ্ণহিন্দুগুলার পূজিত দেবদেবী পূজা অর্চনা, ভক্তিশ্রদ্ধা করার সাথতে নিজস্ব নিয়াম অনুযায়ী বুঢ়া-বুঢ়ী, যখা, তিস্তাবুঢ়ী মাশান, কাতি, মহামই, বাঁশ ইত্যাদি পূজা করে। ধর্মীয় সংস্কারের ভিতিরা আমাতি, যাত্রাপুজা, চড়ক, সোণারায়, কাতিপূজা, সত্যনারায়ণ, সাইটল, ত্রিনাথ ইত্যাদি পূজাও করে। এমুন করি সামগ্রীক ভাবে নৃবিজ্ঞানের খেও ধরি বিচার করিলে সংস্কৃতি আর ধৰ্মর ক্ষেত্ৰত অনেক প্রভাব পরা দেখা যায়। নিজের ধৰ্ম ছাড়াও রাজবংশীলার সাথত বৌদ্ধ, শৈব, শাক্ত প্রভাবের সাথতে অসমের শঙ্করী, বাংলার গৌড়ীয়, বৈষ্ণবের প্ৰভাব পরিছে। এগুলা সূক্ষ্মভাবে বিচার আর বিশ্লেষণ করা প্ৰয়োজন। পদ্ধতির পাকেও গবেষক গুলানে নজর রাখা উচিত।

     

Spread the love